Adcash

ভবঘুরের রাজ্যদর্শন ৬

 'ভবঘুরের রাজ্যদর্শন'

'বিভীষণের বিভীষিকা'



কদিন খুব শরীর চর্চা হচ্ছে। প্রতিদিন ভোরে ফজর নামাজ পড়েই গ্রামের কাপা রাস্তা ধরে মাইল দশেকের মতো আমরা কয়েকজন দৌড়াদৌড়ি করি। আমি, পাভেল ভাই, সোহেল, আলমগীর আমরা এ চারজন প্রায় নিয়মিত দৌড়াতাম। আরো অনেকেই যেতো কিন্তু নিয়মিত ছিল না। 

একদিন হঠাৎ দেখতে পেলাম আমাদের গ্রামের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও আমাদের সাথে শরীর চর্চায় যোগ দিলেন। আমি অনেকটা খুশি হলাম যে, স্যারও আমাদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে শরীর চর্চা করতে এসেছেন। পরনে কোনোরকম একটা পুরাতন জামা, একটা পাজামা ও ছেঁড়া জুতা ছিল। পেছন থেকে মনে মনে খানিকটা সমালোচনাও হয়ে গেলো। কিন্তু না, কিছুক্ষণ পর যখন স্যারের সাথে কথা বললাম তখনই সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। স্যার এখানে বদলি হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন শরীরচর্চা করেন। একেকদিন একেক রাস্তায় বের হোন। স্যার যখন তার হাঁটার গতি বাড়াতে শুরু করলেন আমরা তাজ্জব বনে গেলাম। আমরা চার পাঁচ জনের কেউই স্যারের সাথে হেঁটে পারছি না। অনেক চেষ্টা করেও স্যারকে পেছনে ফেলা গেলো না। অবশেষে দৌড়েই স্যারকে পেছনে ফেললাম। হাসলাম বিজয়ীর হাসি। কিন্তু সে বিজয় যে ক্ষণস্থায়ী, তা পরে বুঝতে পারলাম। আসলে "জেতাই প্রতিযোগিতার সব না, হারাও অনেক কিছু"। আলমগীর পেছন থেকে বলছে, " আমাদের স্কুল কয়েকদিন আগে ভবন নির্মাণের সরকারি অনুদান পায়। জায়গা নির্ধারণ করতে মিটিং ডাকা হলো। সবার মতামত পুরাতন টিনের ঘরগুলো ভেঙ্গে ভবনের জায়গা করা হোক। স্যার এক কথায় বিরুদ্ধমত পোষণ করলেন "না" বলে। স্যার বললেন, "আমাদের তো অসংখ্য পতিত জায়গা পরে আছে। কেনই বা স্কুলটাকে সংকোচন করব? এ অপচয়ের ভার কে নিবে? আপনারা? টিনের ঘরগুলো কোনো কাজে না লাগলে ছাত্রাবাস করে দেবো, তবুও এটা ভাঙ্গা যাবে না।" স্যার শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাজে একটু ফিটফাট কিছু পরে যান, নয়তো স্যারকে সাদাসিধে ড্রেস ছাড়া অন্য কোনো ড্রেস পরতে দেখিনি কনোদিন। স্যার আমাদের আদর্শ। আমাদের গর্ব।"

ততক্ষণাৎ আমার কিপ্টে বারেকের কথা মনে পড়ে গেলো। কতো মহান একজন লোককে মানুষ পেছন থেকে কতো কি-ই না ভাবে! 

স্যারের একটা কথা খুব কানে বাজতো, "যতো অল্প বয়সে শরীরচর্চা, ততো অধিক বয়সে সুস্থ থাকা"। 



কিন্তু এখন আর দৌড়াদৌড়ি করতে মন চায় না। 


রেদ্ওয়ান আহমদ 

(অসমাপ্ত)

Comments

Popular Posts