Adcash

কাব্যে নজরুল

 বইতে দেখিলাম একখানা ছড়া, তাহা যে নজরুল কবিতা;

স্যার পড়ালেন যত্ন করিয়া অ-আ-ক-খ পড়ার বেলা।

সেই থেকে শুনি, নজরুল কবি, জাতীয় কবিও যে সে;

চিনিতে লাগিলো বছর কয়েক বিদ্রোহী কবি নজরুল এ যে।

উনিশ শতকের শেষ বছরের চব্বিশই-মে রোজ ভোরে;

সাম্যবাদের মোহর মেরে আসিলো মা জাহেদার কোলে।

চুরুলিয়া গাঁয়ের বাবা কাজী ফকির ইমাম ও পড়াতেন মক্তবে;

পাঁচ ভাই-বোনের সংসার পাতিয়া থাকিতেন সুখে শান্তিতে। 

হঠাৎ করিয়া নজরুল পিতা ছাড়িয়া গেলেন যে তাহাকে;

পরিবারের বোঝা টানিতে হইলো তার মাত্র ন'বছর বয়সে।

সেই থেকে সবে ডাকিতো তাহাকে নাম করি দুখু মিয়া;

অভাবের বোঝা কাঁধেতে বাহিয়া খুঁজিতে চলেন  জীবিকা।

আযান দেওয়া আর কুরআন পড়ায়ে 

পেশা হইলো শুরু;

বেশি দিন তাহা টিকিলো না তার হইলেন লেটো দলের তরু।

হইলো শুরু তার গানের জীবন আর গানের জগৎে চলা;

একটা-দুইটা গান-কবিতা লিখিতেন লেটো দলেই বসিয়া।

খুলিলেন বই, আছে যত সই বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি;

সঙ্গীত রচিতো একে একে অনেক চাচার লেটো দলের লাগি।

ঝাঁকড়া চুলের দুখু মিয়া কখনো সানন্দে গান গায়;

কখনো কখনো চরণ রচে সে সকালের পাখি হইবার চায়।

লেটো দল ছাড়ি দশ সালে আসি সিয়ারসোল স্কুলে ভর্তি;

একে একে স্কুল পাল্টাতে থাকিলো সে ছিলো বড়ই অভাবী।

ছুটিতে ছুটিতে জীবনের তরে, ঠেকিলো রুটির দোকানে;

আবারও রফিজ প্রতিভা দেখে তার ভর্তি করে স্কুলেতে।

ধরিয়া বাঁধিয়া রাখিতে তাহাকে পরিলো না আর কেহ;

প্রযোজন তারে নেকড়ের মতো শুধু  দৌড়াইতেই থাকিলো।

যোগ দেন পরে সৈনিক পদে, প্রথম জগৎযুদ্ধ লাগিলে;

কাটাতে লাগিলেন যাযাবর হয়ে, কাঁদিলেন বিশ্ববাসীর কষ্টে। 

দেখিয়া দেখিয়া জালা-যন্ত্রণা হৃদয়ের জল খসে;

কাঁপিয়া উঠিলো অন্তর তার মানুষের লাগি রে।

আড়াইটি বছর সৈনিক হয়ে চলেন এখানে ওখানে;

এঘাট ওঘাট ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্ঞান কুড়াতেন দু'হাতে।

সৈনিক ছাড়িয়া নজরুল যখন ফিরিলেন নিজ দেশে;

সাহিত্যচারণে চরণ ফেলিলেন আপন মন ও প্রাণে।

সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি তার করাচিতে বসেই হয়,

যুদ্ধ শেষে কলম ধরিলেন না করিয়া কাহাকেও ভয়।

"মুক্তি" লেখেন, লেখেন "বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী";

একে একে তারে চিনিলো জগৎ এ যে বাংলারই শেলী।

লিখিতে লিখিতে লিখার স্রোতেই তিনি ধরিলেন পত্রিকা;

" বাঁধনহারা", "আগমনী" "মোহররম", "কুরবানি" তার হাতেই হয় লেখা।

পরিচয় হতে লগিলো তাহার কবি-সাহিত্যিক - সম্পাদকে;

অতুলপ্রসাদ, শহীদুল্লাহ, অবনীন্দ্রনাথ

আর রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে। 

সাংবাদিক হয়ে উঠেন তিনি শেরে বাংলার পত্রিকা হাতে;

প্রবন্ধ লিখিলেন ও বছরই তিনি "মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে"। 

তাহার পরেই পড়িলো নজরে পুলিশ প্রসাশন চোখে;

রাজনীতিতেও নাম লিখালেন তিনি কলম- কালি হাতে।

গান লিখিতেন, সুর করিতেন পত্রিকা হাত ধরি;

একে একে স্বাদ লইতে লাগিলেন সাহিত্যে ভাসালেন তরী।

তেইশ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বইতে চলিলেন কাজী;

বিয়ে করিলেন ঠিকই তবে সে যে নার্গিস নয়, প্রমিলা দেবী।

শর্ত ছলো তার ঘর জামাই হবার, উঠিলেন আসর ছেড়ে;

ফিরিবার পথে লইলেন হাত ধরি, প্রমিলা ছিলো তার প্রনয়ে।

বধূ-তারে আর মানিয়া লহে নি যে এপার- ওপার কেহ;

তবুও তাহারা নিয়ম ভাঙ্গিয়া একে অপরকে করিলেন বিবাহ।

বিয়ে করিয়া কুমিল্লাতেই আসিয়া রইলেন পড়িয়া;

দেশজুড়ে "অসহযোগ আন্দোলন", আসেন রাজনীতিতে নামিয়া। 

ঘুরে ঘুরে তখন পথে দেখিতে লাগিলেন জন-মানুষের দশা;

ভিক্ষা চাইতে গো পুরবাসীরে রচিলেন "বিদ্রোহী" কবিতা। 

নিজের পরিচয় লইলেন তাহাতে "চির বিদ্রোহী বীর"

ধূমকেতুতে প্রকাশ করিতেন, "চির উন্নত মম শির"। 

বিবেক তাহার কাঁদিয়া উঠিলো চির পথবাসীদের লাগি;

ধরণীতে যেনো বাজে না কখনো উৎপীড়িতের ক্রন্দনধ্বনি।

রবী ঠাকুর তাহাকে কয়েক চরণে বাণী যে রচে যতনে;

থমকে দাঁড়ানো নজরুল নয় সে, রচিলেন "আনন্দমরীর আগমনে"।  

নিষিদ্ধ করিলো ইংরেজ রাজা, তার সাথে "যুগবাণী";

কুমিল্লা হতে গ্রেফতার করে তারে রাখে কলকাতার জেলে আনি।

এক বছর কারায় দণ্ডিত হোন নজরুল অলিপুর কারাগারে;

কী ঘটলো তাহার সাথে, লিখিলেন " "রাজবন্দীর জবানবন্দি" তে।

রবীন্দ্রনাথ তাহারে দিলেন তখনি বসন্ত উৎসর্গ করি;

আনন্দে নজরুল রচিলেন "আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে" কবিতাটি।

সাহিত্য জগতে বিদ্রোহী আর গানের জগতে বুলবুল;

সাম্যবাদ গড়িতে জগতে তাহার নাই যে কোনো তুল।

জেলের ভিতরেই চল্লিশদিন টানা অনশন করে করে;

ইংরেজ রাজার জুলুম প্রতিবাদে ইতিহাস যায় রচে।

বছর খানেক পরেই নজরুল মুক্ত হইলো রে কারা;

"জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাত জালিয়াৎ খেলছে জুয়া"।


                                                  (সংক্ষেপিত)

 ~ রেদ্ওয়ান আহমদ 

Comments

Popular Posts