আধুনিকায়নের প্রাদুর্ভাব
আজ আর লিখতে ইচ্ছে করে না,
কলমের কালিদের আর্তনাদে প্রাণ আর সহে না।
নেই আকাশের ঝলকানো চাঁদের__
জোৎস্না ভরা রাতে অনুভূতিদের অস্তিত্ব,
তাই, পাপাত্মাদের উচ্ছ্বাস-উল্লাসে মন খারাপ হয় না।
ভোরের শিশির-মাখা দূর্বাঘাস,
রোদেলা উদাস দুপুর আর দিনের শেষে__
লালচে গোধূলি সন্ধ্যে থেকে থেকে ডাকে আমায়।
খুঁজে লই চৈত্রের হলদে ধান, ধান শীষের সবুজ পোকা,
আর কী আছে কৃষকের সেই ছন্দময় ধানের বোঝায়।
বৃষ্টিহীন হেমন্তের বিল-পুকুর, রুপোলী পুঁটির ঝাক,
জেলেদের জাল ছুঁড়ে মারা আর রাখালের হাঁকডাক,
দেখিতে যাই না আজ, তাইতো পড়িছে সাজ,
দিনে নয় শুধু যেনো, জীবনের বাঁকেবাঁকে__
আধুনিকতার যৌবনে যেনো এসব পড়িছে ভাঁজ।
কাঁপা-কাঁপা শীতের সকালে শার্টের বোতাম খুলে
গা পোহাই না আর উঠোনে বসে,
ধরিতে যাই না ছিপ হাতে টাকি-কই, টেংরা-বাইলা মাছ,
দাঁড়কাকেদের কোরাস স্বরে ভয় আর হয় না যেনো,
কান বদ্ধ তাই শুনতে পাই না কাঠঠোকরুর সেই ঠুকঠাক আওয়াজ।
পড়ার টেবিলে বসে আলোর নিচে মাথার উপর__
জানি না কতো নিখুতভাবে বুনে মাকড়সারা জাল,
ঝুপড়িতে যেয়ে দেখি না আর হাঁসেদের ডিমপাড়া,
শুনি না ভোরের আজান আর কক-ককা-কক ধ্বনি,
দেখি না আর কারো গাছে যেয়ে চুরি করে ঢিলমারা।
মধুর খোঁজে মৌমাছিরা ফুলে-ফুলে উড়ে চলে,
ফোঁটা-ফোঁটা রস চাটতে ছুটি খেজুর গাছের নিচে,
পাকা পাকা আর টকটকে লাল টমেটো-গাজর করতাম চুরি,
কাঁচা হলুদ চুরি করে আর পাটায় বাটি না এখন,
সরমাদানীর সুরমাও আর চোখেতে না পড়ি।
ফুলের গন্ধে মন মাতোয়ারা হয় না,
টিনের চালে চমকাতে থাকা চাঁদটাও আজ অচেনা,
রংধনুতে রং ক'টা কী জানি,
নদীর পাড় হতে আকাশ ছুঁতে ঈগল, গাঙচিল আর বাজপাখির ডানায় চাই না ভাসি।
এ জীবনে নতুন করে আর জন্মাতে চাই না,
দোর খুলে ভোর দেখতে গিয়ে বারবার যেনো পিছলে পড়ি,
আকাশ কোথায় খুঁজি না তারে দিগন্ত উন্মোচিত করে,
অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রই, খসে খসে যেনো পড়ছে সবি,
সবে আছি পড়ে আজ শুধু একটি মোবাইল ফোনে।
আধুনিকায়নের প্রভাব
Comments
Post a Comment