Adcash

আজ বরং বৃষ্টি হোক

 আজ বরং বৃষ্টিই হোক।



"এই রিক্সা, রমনা যাবা?" প্রশ্ন করল খালেদ। "হু" বললে খালেদ রিক্সায় উঠে বসল। ধীরে ধীরে রিক্সা এগোতে লাগলো। খালেদের মন আর মানছে নে। কখন যে রিক্সা রমনায় যেয়ে পৌঁছুবে। "ওইদিকে আয়েশা হয়তো রমনায় কোনো গাছতলায় বসে আছে এতক্ষণে" খালেদ মনে মনে বলতে থাকল। আজই প্রথম সে মেয়েটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। মনে একটা উদ্বেগও কাজ করছে, মেয়েকে ও কখনো দেখে নি৷ যদি কালো হয়! আর যদি মেয়ে রূপসী হয়, আর আমাকে পছন্দ নদ করে! খালেদ চিন্তায় দ্বিধাদন্দ্বে পড়ে গেলো। যাইহোক, দশ-পনেরো মিনিটের মাথায় রিক্সা ঈদগাহ ময়দানের সামন দিয়ে রমনার মূল ফটকে পৌঁছল। এখন ঝামেলা হলো আয়েশা খালেদ চিনবে কীভাবে। ও বলেছে, কালো বোরকা পরে আসবে। কিন্তু ইদানীং তো অনেকেই কালো বোরকা পরে। ফেসবুকে আজ দুইমাসের পরিচয় হলেও খালেদ কখনো নাম্বার চাইতে পারেনি। আর দুনিয়া ভেসে গেলেও মেয়েরা কখনো নিজ থেকে কিছু করে না৷ এ যেনো মেয়েদের এক মুদ্রাদোষ। কিন্তু সব চিন্তাকে উপেক্ষা করে ফোনটায় হটাৎ টুং শব্দ করে উঠলো। খালেদ চেয়ে দেখলো ফোনের স্ক্রিনে একটি মেসেজ ভেসে আসল, "গেটের বরাবর হাটতে হাটতে ভিতরে একটা রেস্টুরেন্ট পাবে। সেখানে আমি আর ইমা বসে আছি"। "ধুর ছাই, ইমাটা আবার কে?" খালেদ মনে মনে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু রিপ্লাই মেসেজে প্রশ্নটা করার সাহস করেনি সে। তিন-চার মিনিট হেঁটে রেস্টুরেন্টে ঢুকছে খালেদ এমন সময়, পেছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো, "আসসালামু আলাইকুম"। পেছন ফিরে দেখতে পেলো বোরকা পরা দু'টি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। "ওয়ালাইকুম আস সালাম, আয়েশা?" "না, আমি ইমা। ও আয়েশা"। " ও আচ্ছা"। খালেদের লজ্জায় চোখ নিচু হয়ে আসল। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা বোরকা পরা মেয়েদেরকে সচরাচর উপেক্ষা করে চলে। কিন্তু তাতে কী? তাদের বোরকায় ঢাকা সম্পদ যে মাছির খাবার হয় না, তা তারা ভালো করেই জানে। দু'টি বোরকা পরিহিতা মেয়ের সামনে খালেদের কথা বলতে ঠোঁট কাঁপছে। ইমা বলে উঠল, "আসুন আমরা ওদিকটাতে বসি"। খালেদ যেনো গুটিয়ে গেলো। ওরদ বোরকা পরে এসেছে অথচ তার পরনে কোনো পাঞ্জাবি-পাজামা নেই। ও ভাবছে, এই মুহূর্তে যদি পাঞ্জাবি-পাজামা পরে আসতে পারতাম। মনের অজান্তেই পাঞ্জাবি-পাজামার প্রতি তার একটা আকর্ষণ চলে এলো। অথচ, ঈদ আর জুম্মা ছাড়া ও কখনো পাঞ্জাবী-পাজামা পরেছে কিনা সন্দেহ আছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারে উঠেও এর আগে সে কখনো এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে নি। "ওয়েটার, তিন কাপ কফি, প্লিজ" আয়েশা অরডার করল। এই প্রথম আয়েশার কণ্ঠ ও শুনলো। চাপা গলায় ভারী মিস্টি স্বর! খালেদ হটাৎ বলে উঠল, "তো কেমন আছেন, আপনারা?" অনেকক্ষণ পর মুখ ফুটে কথা বেড়োল খালেদের। "আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমরা" আয়েশার চাপা কণ্ঠে ভেসে এলো। খালেদ আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারল না। নীরবতায় খানিকক্ষণ কেটে গেল। গোধূলিও নেমে আসল। খালেদ লক্ষ্য করলো মৌমাছি এসে একটি পাতার উপর বসে গুনগুন গান গাইছে। পাখিরা ডানা ঝাপটিয়ে ঝাপটিয়ে এসে গাছের উপর বসছে। মৃদু বাতাসে নুয়ে পড়া পাতাগুলো আবার উড়ছে। এমন সময় আয়েশা প্রশ্ন করে উঠল, "আপনি কি নিয়মিত নামাজ পড়েন?" খালেদ হঠাৎ নড়ে উঠল। এমন প্রশ্নের জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না। কী বলবে না বলবে ভাবতে ভাবতে উত্তর দিল, "হ্যা, পড়ি আলহামদুলিল্লাহ"। " 

আচ্ছা একটা অনুরোধ রাখবেন" আয়েশদ পুনরায় জিজ্ঞেস করল। "অবশ্যই, বলুন"। পরে আয়েশা খালেদকে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে কিছু একটা আনতে পাঠাল। খালেদ জিনিসটা আনতে চলল, তবে টাকা নিল না। মনে হচ্ছে যেনো, রাজ্য জয়ের নেশা লেগেছে তার৷ বীরের বেশেই ফিরবে। ফিরলও তাই। এরমধ্যে অনেক সময় চলে গেল। আয়েশা, ইমা ততক্ষণ পর্যন্ত ও স্থানেই অপেক্ষা করতেছিল। আসার পর আয়েশা ধন্যবাদ জানিয়ে আবার প্রশ্ন করল, "আচ্ছা, আপনি কি আসর নামাজ পড়েছেন"? রাজ্য জয়ের পরপরই এমন কঠিন কাজ কৈফিয়ত কেউ চাইবে তা খালেদ কল্পনাও করতে পারেনি৷ খালেদের সাহস বেড়ে গেলো। ভাবল, মিথ্যার উপর ভিত্তি করে ভালোবাসা টিকে না। খালেদ, বলল, "নাহ আমি নামাজ খুবই কম সময় পড়ি"। এমনও সময় আছে এজ জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত কোনোদিন মসজিদেও যাই না"। হ্যা, আমি ধারণা করতে পেরেছিলাম এ দু'মাসে। আপনি যখন চ্যাটিং করতেন অনেক সময়ই আজান দিতো, কিন্তু চ্যাটিং চালিয়েই যেতে থাকতেন। আমি কিছুই বলতাম না৷ আপনাকে পরীক্ষা করতেছিলাম যে, আপনি কেমন এবং কী চান? আজকে আপনার লজ্জিত মায়াভরা মুখ দেখে আপনাকে এতোটুকু বুঝতে পারলাম যে, আপনি নির্লজ্জ ছেলেদের মতো না। শেষে নামাজের প্রশ্ন করলাম। আপনি নিয়মিত নামাজ না পড়লেও মিথ্যা বলে শান্তি পাচ্ছিলেন না। সেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। শার্টে পাঞ্জাবির স্বাদ পাবেন না এটাই ঠিক। কিন্তু আপনি শার্টটা টানাটানি করতেছিলেন শরীরটা আরেকটু ঢাকার জন্য। আপনার জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেনো আপনাকে সঠিক নামাজী বানিয়ে দেন। আর হ্যা, যারা বিনয়ী ও ভালোমানুষ সাজতে যেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তারা আর যাইহোক ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা রাখে না। আপনি গ্রাজুয়েশন শেষ করুন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। ভালো থাকবেন। ফি আমানিল্লাহ।"

খালেদ ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে আয়েশার হাঁটার উপর। হেটে-হেটে চলে যাচ্ছে সে। খালেদের দু'চোখ হতে ঝরঝর করে অশ্রুফোঁটা মাটি ছুঁয়ে যেতে লাগল। খালেদের যেনো আর কিছুই বলার ছিল না৷ হঠাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকল৷ মুহূর্তের মধ্যেই বৃষ্টি নেমে আসল। আজ খালেদের খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে৷ ফোন মানিব্যাগ যা হবার হোক সে দিকে তার দৃষ্টি নেই। বৃষ্টির সাথে একাকার হয়ে মিশে যেতে থাকলো খালেদের চোখের আনন্দাশ্রু। আজ বরং বৃষ্টিই হোক।

চলবে............

Comments

Popular Posts