Adcash

দাঁড়িকমা

 "দাঁড়ি-কমা"


মেমবার সাব, শুনছি সরকার নাকি টেকা দিতাছে। আমরার দিকেই একটু চায়েন-চুয়েন কিন্তু। ভোটটা কিন্তু আমরাই দেই সবার আগে, মনে রাইখেন কথাটা।", ওলিপুর গ্রামের তিন নং ওয়ার্ডের মেমবার শহীদ মিয়াকে বললেন কাসেম ব্যাপারী। বাজারে একটা কাপড়ের ব্যবসাদার কাসেম ব্যাপারী। এবারের ঈদে কেউ মার্কেট করতে শহরে যেতে পারে নি, আর গ্রামেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তাই, কাপড়ের ব্যবসাটাও দারুণ হয়েছে৷ কিন্তু তবুও যেনো মেমবারের দেয়া মাত্র আড়াইহাজার টাকার জন্য তিনি অসুখী অনুভব করছেন। তার নাম কেনো ত্রাণলিস্টে দেওয়া হয় নি, তাই তিনি কুতুব মিয়াকে সেদিন ইচ্ছে মতো শাসালেন। কুতুব মিয়া হলো চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রীদের মতো শহীদ মেমবারের একমাত্র উপদেষ্টা। উপদেষ্টা বললে মনে হয় বরাবরই ভুল করা হবে, একমাত্র সচিব বললেই বরং ভালো হবে। শহীদ মেমবার জীবনে স্বর-অ, স্বর-আ পড়েছে কিনা সন্দেহ আছে। তাই, ওনার সব কাজ কুতুব মিয়াকেই করতে হয়। "ব্যাপারী সাব, কুতুব পোলাটারে পাঠাইমু নে, কিছু কাগজপত্তর লাগবো। দিয়া দিয়েন", বললেন শহীদ মিয়া। "আচ্ছা তাইলে" বলে উল্টোদিকে মুখ করে পথ এগোলেন কাসেম ব্যাপারী। আর এদিকে শহীদ মেমবারও চলে গেলেন তার পথ ধরে। কয়েকদিন পর কাসেম ব্যাপারীর সাথে হঠাৎ কুতুব মিয়ার আবুল মিয়ার মুদিদোকানে দেখা হলো, "কিরে, সরকার থেইকা না তোরার টেকা দেওয়ার কথা ছিলো। লিস্টে নামও নিলি, কই আমারে তো দিলি না তো"। "কাকা, টেকা তো দেওয়া শেষ আইজ শুক্কুরে শুক্কুরে আষ্টদিন হইছে"। "কী?" কাসেম ব্যাপারী যেনো আকাশ ভেঙে পড়লেন। "হু কাকা, সবার মোবাইলে মোবাইলে পাঠাই দিছে টেকা। আপনের মোবাইলে কোনো মেসেজ যাই নাই?"  "কই আইতে তো দেখি নাই" "দেখি কাকা, মোবাইলটা আমার কাছে দেন, দেখি কোনো মেসেজ আইছে কিনা"। কুতুব মিয়া মেসেজ দেখতে আরম্ভ করলেন। অনেক নিচে যেয়ে কাঙ্ক্ষিত মেসেজটা পেলেন, সাথে সাথে পড়ে শুনালেন, " প্রিয় হোম কোয়ারেন্টাইনবাসী, আপনাদের পরিবারকে এই করোনা পরিস্থিতিতে সাহায্য করনার্থে নগদ একাউন্টের মাধ্যমে সরকার আপনার ফোনে আড়াইহাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আপনি আগামী বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে চার কোডের একটি পিনকোড চাপুন। অন্যথায়, আবেদন বাতিল বলে গন্য হবে"। কিন্তু এই মেসেজ কাসেম ব্যাপারীর চোখ এড়িয়ে যায়। কুতুব মিয়া বললেন, "কাকা, আপনে যদি মেসেজটার সাথে সাথে চার সংখ্যার একটা পিনকোড দিতেন, তাইলেন টেকাটা পাইয়ালাইতেন। এখন এইটাতে আর আমরার কিছু করার নাই। আমরা আপনের নাম লিস্টে ঠিকি দিছি। নাইলে টাকার কোনো মেসেজই আইতো না"। কাসেম ব্যাপারী যেনো নিজের চোখ এবং কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। আড়াইহাজার টাকা ওনার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে? এ হতে পারে না। তিনি বারবার মেসেজটা পড়তে লাগলেন। কোনো উপায় বের করতে পারেন কিনা চেষ্টা করতে লাগলেন। শিক্ষিত কিছু পোলাপানের কাছেও মেসেজটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলেন। কিন্তু শেষ-মেষ কিছুই করতে পারলেন না। ওনার কপালটাই যে খারাপ ওনি সেটা বিশ্বাসই করতে পারলেন না। পরে ওনি বলতে লাগলেন, " যত দোষ নন্দঘোষ। আমারে টেকা না দিয়াই যে আবোলতাবোল বুঝাইয়া গেলা তা কি আমি বুঝি না? আইস এইবার ভোটটা নিতি। একেবারে ভইরা দিমু।" 



~ রেদ্ওয়ান আহমদ 

Comments

Popular Posts