Adcash

স্বপ্নাত্মা

 "স্বপ্নাত্মা"

জানি না কেনো জানি কিছুদিন অন্তর-অন্তরই দুঃস্বপ্ন দর্শন করিতেছি। আজিকেও তাহা আমার সহিত পুনঃবার ঘটিল। জানি না উপাস্য আমার অদৃষ্টে কী রাখিয়াছেন! জানি না ইহা কি কোনো আগাম সতর্কবাণী নাকি কৃতকর্মের প্রাপ্য! হে উপাস্য, বিবেকবোধ জাগাইয়া দিয়া মঙ্গল দান কর। আজিকে বিধানদাতার ফজরের আদিষ্ট বিধান পালন করিয়া লইয়া ঘরেতে আসিয়া পবিত্রতা না থাকিবার দরুন "ফ্রয়েড ও আধুনিকতা" পড়িতেছিলাম। অতঃপর ড. সৌমিত্র শেখরের "কবিতায় নুয়ে পড়ে কাঁটাতার" হেডলাইনের সবাকটি "বইয়ের ফেরিওয়ালা" নামক ইউটিউব চ্যানেল হইতে দৃশ্যাবলোকন করিতেছিলাম। মুহুর্তেই লুটাইয়া পড়িলাম। পরক্ষণেই জীবনেতিবৃত্ত একখানা দৃশ্যপট আবিষ্কার করিলাম! গ্রামের হাট সংশ্লিষ্ট টাওয়ার গোড়ায় বন্ধু বুরহানের দোকান সম্মুখে ফেরি'য়ালা হইতে সামান্য কিছু খাদ্য লইয়া দোকানের অভ্যন্তরে যাইয়া ভক্ষণ করিতে লাগিলাম। আকস্মিক বাহিরে দৃষ্টি পড়িল। দর্শন করিলাম, বাবুলসহ আরো কয়েকজন মিতা এদিকটায় হাটিয়া আসিতেছে। আমি আশ্চর্যান্বিত হইয়া তাহার অভিমুখে তাকাইয়া থাকিলাম। কিছুতেই বুঝিতে পারিলাম না, যে মানুষটা দু'বছর পূর্বেই আত্মহত্যা করিয়া গত হইয়াছে, সে মানুষটা পুনঃরায় কীভাবে তাহাদের সহিত আসিতে পারে! আমি সম্মুখভাগে আগাইতেই বাটের উত্তর পার্শ্বে আরেকখানা টঙ-দোকানের অগ্রভাগেই বাবুল দাঁড়াইয়া রহিল। আমি কিছুতেই কোনোকিছু ঠাহরাইতে পাড়িতেছিলাম না। আরো আশ্চর্যান্বিত হইলাম যে, আমি বৈ অন্য কেহই তাহাকে দেখিতে পাড়িতেছে না। সবাইকে জোর গলায় বলিতে লাগিলাম, এ তো বাবুল, এ তো বাবুল। বাবুল আবার ফিরিয়া আসিয়াছে। কিন্তু সবাই আমাকে কেমন যেনো মনে-মনে বিদ্রুপ করিতে লগিল মনে হইল। কাহাকেও বিশ্বাস করাইতে পারিলাম না যে, এই সেই বাবুল- যে দু'বছর পূর্বেই চলিয়া গিয়াছে! কিন্তু আরো চমকাইয়া দিল তাহার রূপদ্বয়! দু'রূপে বাবুল বর্তমান! বাবুলদ্বয়ের মধ্যে এক রূপ টঙ-দোকানে যাইয়া বসিতেই অপর রূপ উধাও হইয়া গেল। এদিক-সেদিক তাকাইয়াও আর সে রূপ খুঁজিয়া পাইলাম না। সবাইকে উপেক্ষা করিয়া উপবেশিত রূপখানা আমাকে হস্ত-ইশারায় নিকটে ডাকিল। আমিও বাধ্যগত সুপুরুষের মতো তাহার সন্নিকটে যাইয়া দাঁড়াইলাম। যাইতেই সে জেব হইতে একখানা বিশ টাকার নোট ও দু'খানা পাঁচ টাকার নোট আমার হস্ত-মুঠে গুঁজিয়া দিয়া কহিল উপাসনালয়ে দান করিয়া আসিতে। আমি চলিতে লাগিলাম তাহার নির্দেশের অনুকূলে। কয়েক কদম হাঁটিতেই আমার দেহ যেনো কেমন ঝিম ধরিয়া আসিল। উপলব্ধি করিতে লাগিলাম, আমার কদম আর সম্মুখে অগ্রসর হইতেছে না। তনু ঢলিয়া-ঢালিয়া পড়িতেছে। কেমন ডানাভাঙা বিহঙ্গ মনে হইতেছিল। পদতলে মাটি স্পর্শ করিতে পারিতেছি না, শূন্যেও উড়িতে পারিতেছি না। হঠাৎ আবিষ্কার করিলাম, আমার কণ্ঠ হইতে কোনো আওয়াজ বাহির হইতেছে না। কী অবাক করা কান্ডই না ঘটিতে লাগিল একের পর এক প্রচুর পরিমাণে ভয় আমাকে আচ্ছন্ন করিতে লাগিল। কেহ আমাকে দেখিতেছেও না যে আমি এমন অনিষ্ট সাধিত হইয়াছি। খানিক্ষণ পরেই দূরে দৃষ্টি ক্ষেপণ করিয়া সেই অদৃশ্য রূপী বাবুলকে দেখিতে পাইলাম। যে একটু পূর্বেই উধাও হইয়া গিয়াছিল। আমি চলিতে পারিতেছি না, কথা কহিতে পারিতেছি না  তার উপর আবার সে আমার পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। আমি ভয়ে আলোকরশ্মিকে কেমন নীল-নীল দর্শন করিতেছিলাম। এমন সময় আমার এক সুহৃদ কেমন অদৃশ্য বলে আমার অবস্থা উপলব্ধি করিতে পারিয়া সেই অদৃশ্য হওয়া বাবুলকে ঝাপটাইয়া ধরিয়া আটকাইতে চেষ্টা করিল। তাহার নজর অন্যদিকে সরিয়া যাইতেই হঠাৎ করিয়া কণ্ঠে আওয়াজ বোধ করিতে লাগিলাম। তৎক্ষণাতই আমি সজোরে "আল্লাহু আকবার" ধ্বনিতে আকাশ-পাতাল ফাটাইয়া আজান দিতে আরম্ভ করিলাম। এতক্ষণে সংলগ্ন সকল মানুষ আমার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকইল এবং আমার উপস্থিতি বুঝিতে পারিল। তৎক্ষনাৎ আমিও আজানে-আজানে আশ-পাশ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করিয়া চিৎকার মারিয়া শয্যা ত্যাগ করিয়া উঠিয়া বসিয়া হাঁপাইতে লাগিলাম। দেখিলাম আপাদমস্তক ঘামিতে শুরু করিয়াছে।


~ রেদ্ওয়ান আহমদ 

Comments

Popular Posts