স্মৃতিকথা
পশ্চিম হতি আসিলো বাতাস, লাগিলো আমার গাঁয়,
সুজলা-সুফলা গ্রামখানি মোর দগ্ধে রূপিলো ছায়।
হায় হায় হায়! স্বকীয়তা মোর ছিনিলো কেমন করি,
আকাশে-বাতাসে সোনার তরী হাঁকিয়া ডুবিলো মরি।
বৃষ্টি আসিতেই থালাবাসন হাতে নামিতো গাঁয়ের কনে,
দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুটের ধুম যে পড়িতো গাঁয়ে।
লুণ্ঠনে করি আম কুড়ানো মানিকেরা গেলো কোথা?
বকিতে ঠাকুর পায় না খোঁজে ঢিল মারিবার খোকা।
যুবতীরা আর করে না চুরি চাচার নৌকা খানি,
রাতের আধারে পদ্মলতা তুলিয়া আনিবার লাগি।
ঝিঁঝি ধরিয়া বোতলে করিয়া কেউ আর রাখে না তারে,
জানালা খুলিয়া পাশের গাঁয়ের ছোকরা ডাকে না রাতে।
কাঁথা সেলায়ের আসরে বসিয়া মায়েরা গাহে না গীতি,
হাঁসের লাগি শামুক কুড়াতে কেউ আর যায় না ছুটি।
ফজর হলেই মক্তবে ছুটা, হুজুরও নেই আর সেই,
আমতলার ঐ ছালায় বসিয়া স্যারের পড়াও নেই।
নেংটি মারিয়া কলার ভুড়ায় নদীতে ভাসে না কেহ,
ঘাট হতি কেহ দলবেঁধে আর লাফিয়ে ভাসায় না দেহ।
রাত হলে দাদা লুণ্ঠন-কোচে মাছ ধরিত খুব,
ঘুমের ঘোরে দাদি, গল্প বলিত কাঁদিয়া ভাসাইত বুক।
জাম কুড়াতে মানিক রতনেরা লাগিত ঢুসুম-ঢুসুম,
বিচার আসিয়া পড়িত ঘরে, ঘরে আর হত না ঘুম।
কাকারা ছুটিছে নগরে-নগরে, ছোটরা ছুটিছে পড়ায়,
দাদারা ঘরেতে একলা বসে হারানো স্মৃতির পাতায়।
চালের দামে শাপলা লয়ে নৌকা ভিড়ে না ঘাটে,
কে আর করিবে ঝগড়া-ফাসাদ, মানুষ তো নেই গাঁয়ে।
বসিত আসর নকশীকাঁথার, কে চলে কার আগে,
বিয়ের দিনেতে বদনা গানে নাচিত কুমারিরা সবে।
যাত্রাপালার মঞ্চ চলিত চাঁদনি রাতের কোলে,
আবালবৃদ্ধ চলিত হাঁকিয়া চাদর গায়ে মুড়ে।
লাঙ্গল-জোয়াল গরুর কাঁধেতে উঠে না রে আর, ভাই,
হাক-হাক বলা লাঠি হাতে লয়ে রাখালও সে আর নাই।
পল্লী গাঁয়ের তরুর ছায়া আর শ্যামল দূর্বাঘাস,
প্রাসাদ গড়িতে দিত না কখনো, যেনো এ দীর্ঘশ্বাস।
হাঁস-মুরগির মায়ায় জড়িয়ে শহরে যেত না মায়,
Comments
Post a Comment